**দুর্গাসাগর দীঘি: ঐতিহ্যবাহী জলাধারের গল্প** দুর্গাসাগর দীঘি বাংলাদেশের বরিশাল জেলার একটি ঐতিহাসিক এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর জলাধার। এর অবস্থিতি এবং স্থাপত্যের বৈচিত্র্য এটিকে বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে পরিণত করেছে। ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে বরিশালের জগদ্বংশী জমিদার পরিবারের রানী দুর্গাবতী এই দীঘিটি খনন করেন। সেই রানীর নামানুসারেই এই দীঘিটির নামকরণ করা হয় দুর্গাসাগর। ### ইতিহাস ও পটভূমি দুর্গাসাগর দীঘির ইতিহাস জগদ্বংশী জমিদার পরিবারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৭৮০ সালে জমিদার রাজ নারায়ণ শঙ্করের স্ত্রী রানী দুর্গাবতী তার প্রজাদের জন্য এই দীঘিটি খনন করেন। সেই সময়কালে পানির অভাব এবং খরার প্রকোপ থেকে প্রজাদের রক্ষা করাই ছিল এই দীঘি খননের মূল উদ্দেশ্য। দীঘিটির…
Author: viewofbd.com
ভূমিকা: পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, যা সোমপুর মহাবিহার নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের বৃহত্তম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলির মধ্যে একটি। নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলায় অবস্থিত এই বিহারটি পাল রাজাদের সময়কালে নির্মিত হয়েছিল এবং ৮ম থেকে ১২ম শতাব্দী পর্যন্ত বৌদ্ধ শিক্ষা ও সংস্কৃতির একটি কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচিত হত। ইতিহাস: পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন পাল রাজা ধর্মপাল (৭৮১-৮১০)। তার পুত্র দেবপাল (৮১০-৮৫০) এই বিহার নির্মাণ সম্পন্ন করেন। ধারণা করা হয় যে, বিহারটির নামকরণ করা হয়েছিল দেবপালের স্ত্রী রানী সোমদেবীর নামানুসারে। স্থাপত্য: পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার একটি विशाल প্রাঙ্গণে অবস্থিত, যার আয়তন প্রায় ৩০০ একর। বিহারটির কেন্দ্রস্থলে একটি বর্গাকার মন্দির অবস্থিত, যার চারপাশে ১৭৭…
মহাস্থানগড় বাংলাদেশের বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্থান। এটি বাংলাদেশে আবিষ্কৃত প্রাচীনতম শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং বাংলার প্রাচীনতম নগরী হিসেবে পরিচিত। মহাস্থানগড় প্রাচীনকালে পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর নামে পরিচিত ছিল এবং এটি প্রাচীন বঙ্গ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। ### ইতিহাস মহাস্থানগড়ের ইতিহাস প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরনো। এটি খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীতে মুর্য্যবংশের শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত হয়। মহাস্থানগড় মৌর্য, গুপ্ত, পাল এবং সেন রাজবংশের অধীনে ছিল এবং পরবর্তীকালে মুসলিম শাসকদের অধীনে আসে। পাল বংশের সময় এটি বাংলার রাজধানী ছিল। মহাস্থানগড়ের অবস্থান ও স্থাপত্য প্রমাণ করে যে এটি একটি উচ্চমাত্রার উন্নত সভ্যতা ছিল।…
মাধবকুন্ড জলপ্রপাত বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি নিদর্শন, যা সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত হিসেবে পরিচিত। মাধবকুন্ড জলপ্রপাত প্রাকৃতিক দৃশ্যের অপূর্ব শোভা এবং পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য বিখ্যাত। ### প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য মাধবকুন্ড জলপ্রপাত প্রায় ১৬২ ফুট উচ্চতা থেকে জলপ্রপাত আকারে নিচে পড়ে। চারপাশে রয়েছে সবুজ পাহাড়, বনভূমি এবং বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এখানে পথচলা বেশ কষ্টকর হলেও প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য এ কষ্টকে তুচ্ছ করে দেয়। বর্ষাকালে এই জলপ্রপাতের রূপ এবং বেগ দুটোই বৃদ্ধি পায়, যা দেখার জন্য বহু পর্যটক এসময় এখানে ভিড় জমান। ### ঐতিহাসিক পটভূমি মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের নামকরণ নিয়ে একটি…
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার গভীরে অবস্থিত একটি অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান। এটি দেশের একমাত্র স্বাদুপানির জলাভূমি বন এবং সুন্দরবনের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম বনভূমি। এই বনটি বিশেষভাবে সুপরিচিত হয়েছে তার অনন্য জীববৈচিত্র্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য। ### ভৌগোলিক বর্ণনা রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট প্রায় ৩,৩২৫ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। এটি চিরসবুজ বনভূমির একটি অংশ যেখানে প্রধানত পানি দ্বারা আবৃত থাকে বর্ষা মৌসুমে। বর্ষার সময়ে বনের একটি বড় অংশ পানির নিচে ডুবে যায় এবং এই সময়ে বনের সৌন্দর্য তার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে। শীতকালে পানি কমে গেলে বনের মাটি দৃশ্যমান হয় এবং তখন বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ও প্রাণীজগত আরও স্পষ্ট হয়ে…
জাফলং বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপূর্ণ স্থান। সিলেট শহর থেকে প্রায় ৬২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জাফলং একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। ### প্রাকৃতিক সৌন্দর্য জাফলং এর প্রধান আকর্ষণ তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এখানকার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো পিয়াইন নদী, যা খাসিয়া পাহাড় থেকে বয়ে আসা পানির স্রোত নিয়ে গিয়েছে। জাফলং এর নদী, পাহাড় এবং সবুজ বনানী মিলে একটি মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্যপট তৈরি করেছে। পিয়াইন নদীর পানি এতটাই পরিষ্কার যে নদীর তলদেশের পাথরগুলো সহজেই দেখা যায়। ### পাথর উত্তোলন জাফলং এ পাথর উত্তোলন একটি প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এখানকার নদী থেকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পাথর উত্তোলন করা…
### মধুপুর জাতীয় উদ্যান: একটি বিস্ময়কর প্রকৃতি উদ্যান #### পরিচিতি মধুপুর জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলায় অবস্থিত। এই উদ্যানটি দেশের অন্যতম প্রধান ও বৃহত্তম বনাঞ্চল, যা সুন্দরবনের পরেই আসে। এটি প্রায় ৮৪৫ কিলোমিটার বর্গ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্যের ভাণ্ডার হিসেবে মধুপুর জাতীয় উদ্যান পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। #### ইতিহাস মধুপুর জাতীয় উদ্যানের ইতিহাস অনেক পুরনো। মোগল আমলে এই বনাঞ্চল ছিল শিকারের জন্য বিখ্যাত। তখনকার সময়ে মোগল সম্রাটরা এখানে শিকারের জন্য আসতেন। পরে ব্রিটিশ শাসনামলে এই বনাঞ্চলকে সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ১৯৬২ সালে এই বনাঞ্চলকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ####…
লালবাগ কেল্লা, যা ঢাকার লালবাগ দুর্গ নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক দুর্গ। এটি মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র সুবাহদার আজম শাহ কর্তৃক ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ শুরু হয়েছিল, কিন্তু অসমাপ্ত অবস্থায় থেকে যায়। লালবাগ কেল্লার উল্লেখযোগ্য স্থাপনা: শাহী মসজিদ: দুর্গের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত, তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ। এর স্থাপত্যশৈলী মুঘল আমলের নিদর্শন বহন করে। দরবার হল: দুর্গের উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত একটি দ্বিতল ভবন। এটি মূলত প্রশাসনিক কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত হতো। বিবি পরি সমাধি: কেল্লার কেন্দ্রে অবস্থিত একটি সমাধি। এটি শায়েস্তা খানের কন্যা পারিভি বিবির স্মৃতিতে নির্মিত। লালবাগ কেল্লার ইতিহাস: লালবাগ কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন মুঘল সুবাহদার আজম…
### রাঙামাটি: বাংলাদেশের প্রকৃতির রাণী #### ভূমিকা রাঙামাটি, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জেলা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি দেশের মানুষকে বারবার মুগ্ধ করে। এটি কেবল পাহাড় আর জলের মিলনে এক অপূর্ব ভূখণ্ড নয়, এটি বাংলাদেশ ও বিদেশি পর্যটকদের কাছে একটি অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। পাহাড়, হ্রদ, ঝর্ণা এবং বন-জঙ্গলের সমাহার এই অঞ্চলকে প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টিতে পরিণত করেছে। #### ভৌগলিক পরিচিতি রাঙামাটি জেলার মোট আয়তন প্রায় ৬,১১৬.১৩ বর্গকিলোমিটার। এটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবস্থিত এবং চট্টগ্রাম বিভাগের একটি অংশ। রাঙামাটির উত্তরে খাগড়াছড়ি, দক্ষিণে বান্দরবান, পূর্বে ভারতের মিজোরাম রাজ্য এবং পশ্চিমে চট্টগ্রাম জেলা অবস্থিত। এই জেলার অধিকাংশ এলাকাই পাহাড়ি, যার মধ্যে কর্ণফুলী…
### ভূমিকা সুন্দরবন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি বিস্তৃত বনাঞ্চল। এটি বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং জাতিসংঘের ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত। সুন্দরবন বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিস্তৃত, তবে এর প্রধান অংশটি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে অবস্থিত। এটি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এবং বিপুল বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। ### ভৌগোলিক বিবরণ সুন্দরবন ব-দ্বীপ অঞ্চলে অবস্থিত, যা গঙ্গা, মেঘনা এবং ব্রহ্মপুত্র নদীর মিলিত প্রবাহের ফলাফল। এই নদীগুলোর সৃষ্ট পলির দ্বারা সুন্দরবনের মাটি গঠিত হয়েছে। সুন্দরবনের মোট এলাকা প্রায় ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার, যার মধ্যে প্রায় ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশের মধ্যে এবং বাকী অংশ ভারতে অবস্থিত। ### উদ্ভিদ ও প্রাণিকূল #### উদ্ভিদকূল সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল বিভিন্ন…